Wednesday, August 31, 2011

একটি জারজ কবিতা



একদিন সব ভ্রুন মিশে যাবে আকাশের গায়ে
আকাশের সব তারা হয়ে যাবে আমার সন্তান
পৃথিবীর সব চোখ নিভে গেলে ঘুমের আবেশে
টুপটপ হয়ে যাবে তারাগুলো আমার কবিতা

একদিন নিভে গেলে ভোর রাতে আকাশের চাঁদ
তুমি আমি মিশে যাবো একাকার হয়ে
রাতভোর সঙ্গম হয়ে গেলে সারা
শব্দেরা হয়ে যাবে ঈশানের একা শুকতারা

একদিন মেঘে যদি ঢেকে যায় রোদ
কলকাতা হইয় যদি বেবুশ্যে নারী
ধর্ষিতা হয় হোক আমার কবিতা
তাকে আমি জারজ নাম দিতে পারি

Saturday, August 27, 2011

বড্ড বিশ্রী রকম বেঁচে আছি



বাস স্টপে দু মিনিট দেখা
কতদিন পর!তপু,কতদিন!
তুমি চলে যাবার পর আমি আর দিন গুনি না।
রাতের অন্ধকারে ঘুম যখন
নেমে আসে পৃথিবীতে নীল ডানা মেলে,
আমি জেগে থাকি।
জেগে থাকে আমার ঘরের পুবদিকের দেয়ালের টিকটিকিটি।
ক্ষণে ক্ষণে ডেকে উঠে টিক টিক করে
ঠিক ঘড়ির কাঁটার মত।
আমি ডাকি না,আমার যে ডাকার কেউ নেই!

ঘরের লাগোয়া বাগানে প্রতিদিন বিকেলবেলা বসে থাকি।
দখিনা হাওয়া ছুটে আসে,
ফুলের গন্ধের সাথে লুটোপুটি খেলে,
পরাজিত করে নিয়ে যায় দূরে কোথাও।
তাই আমি কোনো ফুলের গন্ধ পাই না।
কতদিন!কতদিন, তপু!
তোমার বুকে শিশুর মত মুখ গুঁজে
শিউলি ফুলের গন্ধ নেই না,
আশ্রয় খুঁজি না!

স্টেশনের শেষ ট্রেনটি যখন হুইসেল বাজিয়ে বিদায় নেয়,
আমি ছুটে যাই না ট্রেন ধরতে।
আমার যে কারো কাছে ফেরার নেই!
শেষ গন্তব্যের কোথায়ও কেউ অপেক্ষায় নেই!
কতদিন!আমি ছুটি না!
কাউকে আঁকড়ে ধরতে,
কাউকে খুঁজে পেতে!
কতদিন, তপু!

স্বপ্নহীন, স্বাদহীন, তুমিহীন এ জীবনে,
আমি কি বেঁচে আছি!
জানা ছিল না।
বাস স্টপে দেখা হঠাৎ দু মিনিট
ঝড়ো হাওয়ায় অতীতের পাতা উল্টে
চাওয়া পাওয়ার সব হিসেব কষে,
আমায় জানিয়ে গেলো-
আমি বেঁচে আছি।
তোমাকে ছাড়া বড্ড বিশ্রী রকম বেঁচে আছি!

নিছক নাটুকে



(
একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা এই গল্পটি। স্বাভাবিক ভাবেই নাম স্থান বদল করা হয়েছে। তবু যদি কারো জীবনের সাথে এই ঘটনা মিলে যায় তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালিয়)

সিদ্ধার্থের এক মুহূর্ত সময় নেই এখন। পাড়ার খুদেদের নিয়ে শিল্পী তৈরির মহড়ায় ব্যস্ত সে। পড়ন্ত বেলায় বৈশাখী হাওয়ায় হাওয়ায় একটা দুটো ছিটকে আসা রশ্মির মতো এইসব বাচ্ছারা। একাই সামলায় এতগুলো বাচ্ছার ঝক্কি। কম তো নয় এদের ঝামেলা।নির্দিষ্ট সময় বার করে সব্বাইকে একজায়গায় করাটাই বড় ব্যাপার। কারো আঁকার স্কুল তো কারোর গানের ক্লাস, কেউ সাঁতার, কেউ স্পোকেন ইংলিশ, এই সবকিছুর সাথে সাথে কম্প্রোমাইজ করে উপরন্তু নিজের পড়াশুনা, টিউশন আরো হাজারো সমস্যার মধ্যে সব্বাইকে একজায়গায় জড়ো করতেই একটা গোটা মহাভারত হয়ে যায়। এত কিছুর পরেও এতটুকু বিরক্তি নেই ওর মুখে। বরঞ্চ সবসময় হাসিঠাট্টা, মজায় ভরিয়ে রাখে ওদের। ওরা তাই সিদ্ধার্থদাবলতে অঞ্জান। প্রতি বছর এপ্রিল নাগাদ অদ্ভুত এক জোয়ার আসে এ পাড়ায়। এই জোয়ার নিয়ে আসে কালবৈশাখী।
অনেক ভাবনা চিন্তা আর অনেক পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধার্থ এবার ভেবেছে রমাপ্রসাদ বণিকের নাটকই মঞ্চস্থ করবে। এই পাড়ার বড়রা এর আগেও দেখেছে সিদ্ধার্থের পরিচালনায় নাটক ওর প্রতি তাই ওঁদের গভীর আস্থা। প্রতিবারের অনুষ্ঠানসূচির সবচেয়ে বড় অংশটা নিয়ে তাই ওঁরা নিশ্চিন্ত এবং অবশ্যই উন্মুখ।

রবিবার বিকেলে অনেক তর্কবিতর্কের পর শেষপর্যন্ত নাটকের প্রথমদৃশ্যের শুভ মহরত শুরু হলো সিদ্ধার্থদের বাড়ির ছাদে। খুদেদের উত্তেজনার শেষ নেই। কে কোন পার্ট পাবে, কার ডায়লগ কত বেশি, কে কতবার স্টেজে উঠবে এইসব হাজারো প্রশ্নের ভিড় করা মুখগুলোকে সিদ্ধার্থ ভীষণ পচ্ছন্দ করে। ওর ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। সেইসব দিনগুলোর কথা, যখন জ্যাঠা, কাকা, বাবা সবাই মিলে রাতে হ্যাচাক জ্বালিয়ে নাটকের রিহার্সাল দিতো।। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ওদের পরিবারে ওই প্রথম নয় বরং ওকে বলা যায় উত্তরসূরী, - নাট্যধারা ওর শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত। অন্য কিছু এত বেশি করে ওকে টানে না। চরিত্র গুলোর সাথে থাকতে থাকতে এক এক সময় এত বেশি করে ইনভলভড হয়ে পড়ে যে ওর নিজের আইডেনটিটি হারিয়ে ফেলে। তখন জেগে ঘুমিয়ে সবসময় শুধু নাটক। এবারের স্ক্রিপটা হঠাৎই ওর হাতে আসে মাস ছয়েক আগে। তখনই এটা মঞ্চস্থ করার কথা ভেবেছিলো। মোট কুড়িটা ক্যারেকটার। ভেবেচিন্তে কয়েকজন কে একাধিক রোলে নিলো। তবু বাদ সাধলো একটা মহিলা ক্যারেকটার। একটু বড়োসড় মেয়েই দরকার। এই পাড়ায় বড় মেয়েরা নাটক সম্পর্কে উদাসীন। স্টেজে উঠে অভিনয় করার কথা ভাবতেই পারে না। বুবলু, বান্টি, শান্ত, সবাই পাড়ায় হন্যে হয়ে খুঁজতে বের হলো, -- কাকে দেওয়া যায় পার্টটা। সময়টা যেহেতু অ্যানুয়াল রেজাল্ট বেরোনোর আগে, তাই এখন আপাততঃ সন্ধ্যেবেলায় নিয়ম করে পড়তে বসা নেই, স্যারের বকা খাওয়া নেই, বাবার চোখ রাঙানি নেই। সব মিলিয়ে ছুটির আমেজ।

রিনি এবার মাধ্যমিক দিয়েছে। পরীক্ষা শেষ হয়েছে একমাস আগে। তেমন কিছুই করার নেই সারাদিন ধরে। তাই বুবলু এসে যখন বললো, ও রাজি হয়ে গেল। প্রথম দিন রিহার্সালে সবাইকে তাদের নির্দিষ্ট পার্ট বুঝিয়ে দিলো। রিনি কোনদিন নাটক করে নি, তাই খুব অসুবিধা হচ্ছে ওর। তাছাড়া সবার সামনে এভাবে ডায়লগ বলতে লজ্জাই লাগছে ওর। সিদ্ধার্থ পাকা অভিনেতা। তাই ওর ডায়লগ ঠিক ওর মতো করেই সাজিয়ে দিল প্রথমে। যাতে খুব বেশি মডিফিকেশনের দরকার না হয়, আগে তো ডায়লগ মুখস্ত করা, তারপর এক্সপ্রেশান। উচ্চারনও একাটা বড় দিক। রিনির চরিত্রের ভাষায় একটু গ্রাম্যটান। `নেকচার মারোনি বাবু’ – বলতে গিয়েই হেসে ফেলছে রিনি।সিদ্ধার্থের প্রতিদিন অল্পসল্প মডিফিকেশন আর উৎসাহেই শেষপর্যন্ত রিনি বলতে পেরেছে ঠিক ঠিকভাবে। এটাই সবচেয়ে রহস্যের বিষয়। কাকে দিয়ে, কখন, কিভাবে, কী কথা বলিয়ে নেবে সেটা শুধু সিদ্ধার্থই জানে। রিনি এতকিছু বোঝেনা। সবে সবুজরঙা মনটাতে পলাশের আগুন লেগেছে। ও তাই রঙ চিনতে পারে, উষ্ণতাও বোঝে কিন্তু রঙের উৎস জানে না। ওর মনের ছোট্ট দুনিয়ায় এখন শুধু একটা দুটো সোনার হরিণ।
যাকে ধরতে পারে না কিন্তু স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্ন দেখা চোখ দিয়ে তাই নতুন ভাবে দেখতে থাকে সিদ্ধার্থদাকে। একটা দিনও মিস যায় না রিনির। প্রতিদিনের ছায়াঘেরা পথে রিহার্সাল। রিনি মনে মনে ছায়াপথ তৈরি করে, যা গেছে সিদ্ধার্থের বাড়ির দিকে। সিদ্ধার্থ খুশি। ঠিক যেমনটি চেয়েছিল, খুদেরা এখন তেমনই ফসল দিচ্ছে। মাঝে মাঝে ওদের অভিনয় দেখে চমকে ওঠে, কখনও আবার মনে মনে নিজেকেই বাহবা দেয়, সে এক পরম আত্মতৃপ্তি। যেনো নেসক্যাফের শেষ চুমুক।

হাতে মাত্র সাতদিন, বাচ্ছারা মোটামুটি তৈরি, কিন্তু এখনও বিস্তর কাজ বাকি। প্রত্যেকটা দৃশ্যের মাঝে শুরুতে কিংম্বা শেষের দিকে মিউজিক নিয়ে এখন নিরন্তর চিন্তাভাবনা। কখনও কাখনও নেপথ্যে সংবাদ পাঠের এক-আধটা টুকরো সম্পূর্ণ নাটকের বিচ্ছিন্নতাকে একসূত্রে বাঁধে। ক্লাইম্যাক্সের জন্যও চাই জব্বর মিউজিক। তাই প্রোগ্রাম ঘাড়ের কাছে চলে এলেও এখনও ওর অনেক কাজ। অন্য কিছু ভাববার সময় নেই। তাছাড়া যেহেতু পাড়ার সবচেয়ে বড়ো দাদা, গেস্ট আর্টিস্ট কম পয়সায় ম্যানেজ করা সাউন্ড সিস্টেম আনা সবকিছুর দায়িত্বই ওর উপর।

মিউজিক রিহার্সালের দিন সবাই কে আলাদা আলাদা কর বলে তোর পার্টটাই কিন্তু মেইন, ভালো করে করতে না পারলে কিন্তু পুরো নাটকটাই ভেস্তে যাবেরিনিকেও একই কথা বলে।

রিনির কাছে এই কথাটার মূল্য আর সবার চেয়ে বেশি। ও প্রাণে মনে চরিত্রের সাথে মিশে যেতে লাগল। আর যতোই রিনি চরিত্র হয়ে উঠছিলো ততই যেন সিদ্ধার্থদা র কাছাকাছি পৌঁছাতে পারছিলো। কোন কোন দিন রিনির অভিনয় দেখে সিদ্ধার্থ হাততালি দিয়ে প্রশংসা করেছে আবার যখন-তখন খেয়েছে বকুনিও। সেইসব দিন গুলো রিনির বড় আনন্দের দিন। এইভাবে একটা করে দিন পার করে শনিবার শেষ রিহার্সাল। সবাই তার চূড়ান্ত অভিনয় দেখানোর জন্য প্রস্তুত।

চৌধুরিদের জমিতে বাঁশ পড়েছে। দ্রুত চলছে স্টেজে বাঁধার কাজ। কিন্তু সকাল থেকেই আকাশের মুখভার। বাচ্চাগুলোরও।যদি রাতে বৃষ্টি হয়’! – এই আতঙ্কই ওদের সবার মনে। কারণ খোলা স্টেজেই পারফর্ম করতে হবে। নাটকের আগেও কিছু খুচরো অনুষ্টান আছে। - গান নাচ গীতিআলেখ্য। কিন্তু এখন যা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে প্রোগ্রাম লেনদি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাত এগারোটার মধ্যে শেষ করতেই হবে। কিছু অনুষ্ঠান কাটছাট করার প্রয়োজন। কোনটা বাদ দেওয়া যায় তাই নিয়েই ভাবনা। যে বা যারা বাদ পড়বে তাদের নির্বাক অভিযোগী মুখ গুলো সিদ্ধার্থকে কষ্ট দেয়।। পাড়ার ব্যাপার, তাই সাত পাঁচ ভেবে শেষে কিছুই বাদ পড়লো না। বিকেল পাঁচটার থেকে নাটকের ছেলেরা এসেছে নাটকের মেক-আপ নিতে। মেক-আপ ম্যানও সিদ্ধার্থ। পাউডারের প্রলেপ, গোঁফ, দাড়ি, পুলিশের উর্দি, ডাক্তারের এপ্রোন, জ্যাঠামশাই এর সব কিছুতেই সিদ্ধার্থ। শুধু রিনির মেক-আপ হচ্ছে বাড়িতে। ছাপা শাড়ি, হাতে শাঁখা নোয়া, সিঁথিতে কপালে সিঁদূরের ফোঁটা। -- একেবারে গিন্নি, ঠিক যেমন নির্দেশ ছিলো সিদ্ধার্থের।

সন্ধ্যে ছটার মধ্যে সবাই মাঠে। বুবলু, টুপাই, বাবাই, শান্ত কাউকেই চেনা যাচ্ছে না। গোঁফ দাড়ি লাগিয়ে হঠাৎ এই বড়ো হয়ে যাওয়ার মজাই অন্যরকম। এই মুহূর্তে মাঠে দর্শক সংখ্যা খুবই কম। মন্দিরের সন্ধ্যারতির কাঁসি, উলুধ্বনি; শঙ্খ বাজছে ঘরে ঘরে। মা মাসিরা সবে চায়ের জল বসিয়েছে। মাইকে আহ্বানবাণী আর কিছুক্ষনের মধ্যেই সবুজ সংঘের অনুষ্ঠান শুরু হতে চলেছে। সমস্ত নগরবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি সত্ত্বর আমাদের অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে দর্শকের আসন গ্রহন করুনউদ্বোধনী সঙ্গীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে একজন দুজন করে ভরে যাচ্ছে মাঠ। নাচ, গান, আবৃত্তি, গীতিআলেখ্য সবকিছু শেষ হতে হতে নটা বেজে গেল। আরামদায়ক পরিবেশ এই মুহূর্তে। ভ্যাপসা গরম হাওয়ায় এখন জলবাহী সমুদ্রবায়ুর স্পর্শ। শুধু আশঙ্কাজনক ভাবে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।

স্টেজে অল্পবিস্ত্র সাজসজ্জার জন্য দশ মিনিট দর্শকমহলের কাছে চেয়ে নেওয়া হলো। নটা দশ। প্রথম দৃশ্য। স্টেজে রিনি, বুবলু, শান্ত। ব্যাকগ্রাউন্ডে আকাশবানী কলকাতার সংবাদ পাঠ রেকর্ডে বাজছে। এদিকে প্রচন্ড ঝোড়ো হাওয়া মাইকে সোঁ সোঁ শব্দ তুলছে ঝোড়ো আবাহন। হঠাৎ লোডশেডিং। বড়রা হাঁকডাক শুরু করেছে জেনারেটর চালু করআরও পাঁচ মিনিট পার হলো। জেনারেটরের সৌজন্যে আবার আলোয় আলোকময়। একটু ঘাবরেই গেল রিনি। এই প্রথম স্টেজে উঠেছে সে। তার উপর এমন সব বিচ্ছিরি কান্ড, ছন্দপতন হওয়ার জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আবার ফিরে বাজানো হলো। টিপ টিপ বৃষ্টি ঝরছে এখন। যদিও গায়ে লাগছে না। রিনির প্রথম ডায়লগ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। দর্শকদের মধ্যে শোরগোল। স্টেজে দাঁড়িয়ে ভিজছে রিনি। সিদ্ধার্থদাএখনও কিছুই বলেনি। এদিকে মাইকম্যান সমস্ত সিওর মাইক গুলো খুলে নিচ্ছে। জল লাগলে ক্ষতি হবে। মঞ্চের সামনে ভাঙাহাট। যে যার মতো বৃষ্টিকে আটকানোর জন্য আস্তানা খোঁজায় ব্যাস্ত। সিদ্ধার্থ এর মধ্যে কোথায় গেছে কে জানে, ওরা স্টেজ থেকে নামার জন্য নির্দেশ পায়নি। স্টেজে দাঁড়িয়েই ওরা ভিজছে। বৃষ্টির জল মুছে দিচ্ছে সিঁদূরের ফোঁটা, পাউডারর প্রলেপ, -- গোটা সাজানো রঙ্গিন সংসার। বৃষ্টি সব কেড়ে নিয়েছে। দিশেহারা রিনি। একে একে সবাই নেমে যাচ্ছে স্টেজ থেকে। রিনি এখনও দাঁড়িয়ে। সিদ্ধার্থদাতো নামতে বলেনি এখনও। পাড়ার লোকেরা এখন মন্দিরের চাতালে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির নামে শাপশাপান্ত করছে; সঙ্গে চলছে বাচ্চাগুলোর পঁচিশ দিনের মহড়ার আশ্চর্য পরিণতির সান্তনা বর্ষণ।

রিনির বাবা স্টেজ থেকে নামিয়ে আনলেন মেয়েকে। রিনির মুখ অন্ধকার। আকাশেরই মতন। মন্দিরের চাতালে উঠে চারিদিকে খুঁজতে লাগলো পরিচিত মুখটাকে। কানও ব্যস্ত পরিচিত কণ্ঠস্বর শোনার অপেক্ষায়। এদিকে মুষলধারে প্রকৃতি উজার করে ঢালছে অকৃপণ ধারায়। আধঘন্টা ধরে একই বেগ। এবার মন্দিরের চাতালও ফাঁকা হতে শুরু করেছে। রিনির চোখেও বৃষ্টির রঙ লেগেছে। সেই জলরঙে ভাসছে অনেক কিছুই প্রথম দিনের রিহার্সাল, বকুনি, উচ্ছসিত হাততালি... আরো কত কি! রিনি খুঁজছে এখনও, অশেষ খোঁজা। একবার মাত্র জটলার মধ্যে ডাক শুনলো – ‘মা, মা, ঘরের চাবিটা কোথায়?’ একগুচ্ছ অন্ধকার মুখের ভীড়ে হারিয়ে ফেলল আবার। সবাই একে একে পা বাড়াচ্ছে বাড়ির দিকে। রিনির বাবাও তাড়া দিচ্ছেন বাড়িতে যাওয়ার জন্য – ‘চলো আজ আর হবে নারিনির গলা বুজে আসছে, প্রথমে বুবলুকে জিঞ্জাসা করলো , -- ‘সিদ্ধার্থদা কোথায় রে’? বুবলু হদিস দিতে পারলো না। রিনির বাবা এবার ছাতা মেলে হাত ধরলেন রিনির। রিনি ভিজে গলায় একটা কথাই বলতে পারলো – ‘সিদ্ধার্থদাকে বলে যাবে না বাবা’!