Friday, September 23, 2011

একা নীলাঞ্জনা আর কিছু প্রলাপ


ঘুম ভাঙ্গতেই দু এক ফালি মেঘ ছুঁয়ে যায়
আরেকটা দিন অন্য রকম ইচ্ছে ডানা
বুকের ভিতর উথাল পাথাল বৈশাখী ঝড়
শরীর ভেজা চুমুর দাগে নীলাঞ্জনা

এক একটা দিন এমন ভাবে শুরু হয়, কোন কিছুই ভাল লাগে না কেনো ভাল লাগে না জানি না কারণ খুঁজে পাইনি কোনদিন জাস্ট ভাল লাগে না ঠিক এই রকম এক একটাদিনে ঘুম ভাঙ্গলেই তোর কথা মনে পড়ে নীলাঞ্জনাএখোনো কি তুই আদুরে বিড়াল এর মত কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকিস?

নীলাঞ্জনার বুকের তিল চাঁদ নেমে আয়
পাহাড় চূড়োয় দাঁড়িয়ে থাকি বিপদ সীমায়
এদিক ওদিক জল চুঁইয়ে যায় ফল্গু ধারায়
গোপন গুহায় তোর শরীরেও জল ছুঁইয়ে যায়

যেদিন প্রথম তোর শরীরের গন্ধ নিয়েছিলাম সেদিন তোর বুকের ওই কালো তিলটা আমাকে ঈশারা করেছিলো সেদিন বুঝেছিলাম বিপদ আছে তোর শরীরের কোণায় কোণায়সাঁতার জানা সত্ত্বেও যে কোন মূহুর্তেই ডুবে যেতে পারি অসীম অতলেমাঝে মাঝে তুই বড্ডো দুঃসাহসী হয়ে যাস তোর উত্তঙ্গু পাহাড় চূড়ায় তোর নাভীর হাল্কা ভাঁজে যখন ঘামের বিন্দু চিক চিক করে আমি অপলক তাকিয়ে থাকিআর
গোল্ড ফ্লেক এর ধোঁয়া উড়িয়ে তোর চোখে দুষ্টুমি ফুটে ওঠে, কি দেখছিস? ডুব দিবি, সাঁতার জানিস তো?

সমস্ত রাত জেগেই থাকি
ঘুম আসেনা, কফির কাপে শব্দ চুমুক
তোর কি কিছুই মনে পড়েনা?

এখন কি তোর কিছুই মনে পড়ে না নীলাঞ্জনা? সেদিন গুলো? তোর সাথে প্রথম আলাপের দুপুর বেলা প্রথম দেখেই চমকে উঠেছিলাম, নীল ফেডেড জিন্স হাল্কা গোলাপী টি-শার্ট এর বোতাম খোলা দুঃসাহসেএখনো কি তোর জয়ের মেঘবালিকা সাজতে ইচ্ছে করে?কলকাতার রাস্তায় বৃষ্টির জল জমলে এখনো কি তুই বাচ্ছাদের মতো সেই জলে খালি পায়ে ঢেউ তুলিস?



কিছু কিছু সর্ম্পকের মধ্যে থাকে ঘাস
ফুলপাতা, আঁকিবুকি নখের আঁচড়
কিছু নীল রং এলোমেলো বিছানা বালিশ
চাদরের ফুল ছাপে লিখে রাখা
তবু মনে রেখো

তোর আর আমার এই সর্ম্পকের কি নাম নীলাঞ্জনা? প্রেম বন্ধুত্ব নাকি আরো বেশি কিছু নাকি হাজার মুখের ভীড়ে পরিচিত মুখ চেনা কেউ? আজ তুই নেই আমার সাথে আমার পাশে, কিন্তু সত্যিই কি নেই তুই?আমার আগোছালো ঘরের দেওয়ালে তুই, আমার আমার বিছানা বালিশ চাদরে তোর প্রিয় স্পর্শ, তোর শরীরের গন্ধআমার বই খাতা, লেখার টেবিল এমনকি জানলার বাইরের আকাশেও তোর উপস্থিতি

জলের পোষাক খোলো!
হেঁটে হেঁটে ফিরে যাও একা
তোমার পায়ের ছাপ
কারা যেন দেখেছে দূরবীনে
কারা যেন অন্ধকারে
প্রশ্নচিহ্ন রেখেছে দরজায়
সকলে প্রমাণ চায় আবিস্কার করে
শরীর আসার আগে
শরীর যাওয়ার পরে
যেটুকু ভূখন্ড পড়ে থাকে!
আমি কিন্তু দেখেছি তোমায়
জলের পোষাকে!


পাহাড়িয়া মেঘেদের ছৌনাচ এখন এই মহানাগরিক আশমানেআর আবোল তাবোল বৃষ্টি ধারাপাত ---- এই আবগারি আবহাওয়ার নিজস্ব নেশা-পাঠশালাহাঁপর ঠ্যালা শহরিয়া কেজো বাতাসে মোহময় সোঁদাগন্ধ অফুরাণআর গোল্ডফ্লেকের ঝাঁঝালো
নিকোটিন স্বাদ ঠোঁট থেকে ক্রমশ আলজিভে অনায়াস স্নায়বিক তরল্যের সব অনিশ্চিত গতিপথ খুঁজে নেওয়াএই টাপুর টুপুর বৃষ্টি বিকেলেবৃষ্টিছাঁও মাটি থেকে একটা হা-ক্লান্ত গরম ভাপ উঠে আসছে উঠে এসে ছড়িয়ে যাচ্ছে রাস্তায়, ফুটপাথে, ঘাসের ডগায় আর চলমান শরীরে শরীরে হলুদ সবুজ লাল নীল গোলাপী কমলাসব রঙ্গীলা ছাতার আড়ালে মুখর হচ্ছে গল্প না-গল্পরা পারস্পারিক বৃষ্টিভেজা জেব্রা পেরোচ্ছে নীল জিন্স আর সাদা শার্টের কলেজ পড়ুয়া দলছুট এক তরুণী কাধেঁর ব্যাগে নিস্পৃহ ভিজে যাচ্ছে সব ভৌগলিক ল্যাটিচিউড-লঙ্গিচিউড, ঐতিহাসিক সব যুদ্ধক্ষেত্র, আঙ্কিক সব জটিল জ্যামিতি কিংম্বা পারমুটেশন্-কম্বিনেশন্ আর ভিজে যাচ্ছেন রবিঠাকুর বায়রন পৌনপুনিক সহাবস্থানে


তোমার সুরক্ষা চাই আর কিছু নয়
আমার শরীর জুড়ে আদিগন্ত পাপ
প্রতিদিন মরি তাই দিনে আর রাতে
আমার ভুলের থেকে আরো দূরে যাও
আমার কাছেতে শুধু নামটুকু থাক
প্রিয় নাম গায়ে মেখে পাপক্ষয় করি
তোমার সুরক্ষাটুকু নিশ্চিত হলে
বিষন্ন শরীর জুড়ে বৃষ্টি নেমে আসে


ভিজে যাচ্ছি তুমি আমি আমরা সবাই ভিজে যাচ্ছে আমাদের সব না-বলা কথা, না-লেখা কবিতা আর আমাদের সব গোপন ভালোবাসা মন্দবাসার ব্যক্তিগত গদ্যআমাদের বুকের অন্ধকার অবচেতনে গান গেয়ে চলেছে এক বাউন্ডুলে বৃষ্টি-বাউল! বৃষ্টিস্নাতা সেই তরুণীটির সাদা জামার আপাত স্বচ্ছতা ফুঁড়ে, ফুটে উঠেছে  অন্তর্বাসের লাজুক বিপন্নতাআর নেশা-পাঠশালায় তখন আদিম আপেলের সেই পুরনো
গল্পটাপরিত্যক্ত কে যেন একা একা মাউথ্অরগানের মরমীয়া সুরে বুনে চলেছে আযান্ত্রিক এক বৃষ্টি-বিষাদসমস্ত দিন আজ টুপ টুপ করে বৃষ্টি পড়ছে সকাল থেকেই আকাশটা আজ কালো রঙের ছোঁয়ায় নিজেকে সাজিয়েছে আর এমন বৃষ্টিদিনে একছুটে তোর কাছে পৌঁছতে মন
চাইছে নীলাঞ্জনা কিন্তু তা আর সম্ভব নয় এটা বোধহয় বৃষ্টিও জেনে গেছেতাই তো আজ সারা দিন ধরে আমাকে নিয়ে খেলেছে বৃষ্টি বারবার ফিরিয়ে নিয়ে গেছে বৃষ্টি ভেজা সেই দিন গুলোর কাছে কখনো শুশুনিয়া পাহাড়ের দিন গুলোতে কখনো গড়িয়ার তোর ফ্ল্যাট এর দিন গুলোতে আবার কখনো বা বৃষ্টির গন্ধ মাখতে মাখতে তোতে আমাতে কলকাতার রাস্তায় পাগলা চক্কর মারার দিনগুলোতে
আর আমি নিরুপায় হয়ে দৌড়ে বেড়িয়েছি কখনো শুশুনিয়া থেকে গড়িয়া, কখনো নন্দন থেকে রাসবেহারীর সাট্ ট্যাক্সিতে তুইও কি আমার মতো স্মৃতি তড়িত আজ নীলাঞ্জনা? নাকি নাকি সেদিন গড়িয়ায় মোড়ে দাঁড়িয়ে আমার মতো স্মৃতি গুলোকেও ঝেড়ে ফেলেছিস মন থেকে একটা একটা করে আজ সারাটা দিন বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে আমার pc তে বেজেছে রবি ঠাকুরের সেই পাগল করা গান, যা তোর ভীষণই
প্রিয় ছিল, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘন ঘোর বরিষায়.........’কিন্তু আজ কাকে বলব আর কী বা বলবো নীল? আমাদের সব কথা ফুরিয়েছে আজ

এই তো রচিছ পথ যে পথে ছলনাও থাকে
আমি তার বুঝেছি কিছুবা, হয়তো অনেক
জানি
'ভালোবাসি' মানে ভালোবাসা নয় কখনো কখনো
দূরে যাওয়ার জন্যও আসতে হয় কাছে
অথবা
চিঠির জবাবে না লেখা কথার মতোই
লুকিয়ে থাকে কিছু রহস্য-গোপন
সব অভিসারে
মেঘের মতোই নেমে আসে
ঝড়ের মতোই উড়ে আসে
পলির মতোই ভেঙ্গে পড়ে
অভিসার শেষে, কপট সময়

আজ বড়ো অবাধ্য বৃষ্টিটা ঠিক যেনো চঞ্চল কিশোরীর মতো, তোর মতো, খুনসুটিতে অস্থির করে তুলেছে আমায় কিছুতেই বাধ মানছে না যতই রাগ করি চোখ পাকাই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে ঠিক তোর মতো আর বারবার আমাকে তোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে যাচ্ছেভাবছিস আমি স্মৃতিমেদুরতায় ভুগছিনা, নীল আজ আমাকে বৃষ্টিতে পেয়েছে আজ আমাকে তোতে পেয়েছে বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে শুশুনিয়ায় এমনই বৃষ্টি ভেজা দিনে আমাদের সফরের কথা সেদিনের বৃষ্টি টাও ঠিক আজকের মতো ছিল আর তুইও হঠা করে সেদিন বৃষ্টি হয়ে গেলি তারপর তুই আর বৃষ্টি মিলিয়ে সেদিন শুশুনিয়া কে ভিজিয়েছিল আমি দাঁড়িয়েছিলাম টেন্টে তোদের ন্ডকারখানা দেখছিলাম সেদিন আমি ভিজি নি তুই আমাকে বলেছিলি ভীতু নীল সেদিন আমি বৃষ্টি কে ভয় পাইনি, ভয় পেয়েছিলাম তোকে যদি তোকে ছুঁয়ে দিলে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ঝরে যায় তোর শরীর থেকে, সেদিন বৃষ্ট ভেজা তোকে পাহাড়ের কোলে রুপকথার মত লাগছিল যদি ছুঁয়ে দিলে তুই সাধারন হয়ে যাসতারপর বৃষ্টি থামলে তুই আমাকে ভাসিয়েছিলি আরেক বৃষ্টিতে সে আগুনে বৃষ্টিতে পুড়তে পুড়তে আমি ভয় পেয়েছি তোর যে কোনো তল নেই নীল, তোর যে কোনো সীমানা নেই, সব সীমানাই তুই ভেঙেছিস অবলীলায় আমি পারিনি, আমি সত্যিই পারিনি নীলআর পারিনি বলেই সেই বৃষ্টির পর তোকে খুব সাধারন লেগেছিল আর পাঁচজনের মতোই, কেন তা জানি না এর কোন উত্তরই নেই আমার কাছে
ভেবেছি তোমাকে ভোর
অমানিশা কেটে গেলে তোমাকেই
ধরেছি জড়িয়ে
ঠোঁট ছুঁয়ে হাত ছুঁয়ে চোখের কাজল ছুঁয়ে
জেনেছি আমার অমল বেঁচে থাকা
তোমাকে ভেবেছি ভোর
ভোরের শিউলি, জুঁই, রাতের গন্ধরাজ
তোমাকে ভেবেছি ভোর
ভোরের শিশির ধোয়া কোমল বকুল
তোমাকে ভেবেছি ভোর
ছুঁয়ে হাত বলেছি আমার গোলাপ গোলাপ
পঁচনের কাল আসে ফুলেরও একদিন!
আমি না, ভাবিনি কখনো

আমার কি সেদিন সাহসী হওয়া উচিত ছিল নীলাঞ্জনা? তাহলে কি আজকের দিনটা অন্য রকম হতো আজকের এই বৃষ্টি মুখর দুপুর বেলা আমার পাশেই থাকতিস তুই? কিন্তু তোর সেই অসাধারন্ত্ব থাক্তো কি? আমি তো তোকে আর পাঁচটা মেয়ের মতো চাই নি, আর পাঁচ জনের মতো আমিও তোকে ভালবাসি নি তুই আমার কাছে রূপকথা, আমার ভালোবাসাও ছিল তেমনি এক জাদু কাঠির স্পর্শ কিন্তু সত্যিই কি আমরা ভালো বেসেছিলাম?তা হলে আমাদের এই ভালবাসা কেনো সাধারন প্রেম কাহিনীর পরিনতি পেল?

গড়িয়া হাটের মোড়ে সেদিন তুই আমাকে দাঁড়করিয়ে রেখে চলে গেছিলি বলেছিলি, আজ আসি, আমাদের দেখা হবে আর কোনদিনই ভালো থাকিস তারপর চলে গিয়েছিল সোজা কোন দিকে না তাকিয়ে জানিশ তারপরও বহুক্ষন আমি দাঁড়িয়েছিলাম ভীড়ের মধ্যে বারবার মনে হচ্ছিল; এই বুঝি তুই ভীড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে বলবি, ‘ কি বে শালা এখানে দাঁড়িয়ে কি মারাচ্ছিস? একটু মাল টেনে আসিকিন্তু তুই আসিস নি সত্যি বলতো নীলাঞ্জনা ভালোবাসা আসলে কি? আমরা কি সত্যিই ভালোবাসা মানে বুঝি? আজ এই প্রশ্নটাই আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে নীল অথচ দ্যাখ সাহস করে বলতেও পারছি না কেমন আছিস নীল, প্লিজ তুই ফিরে আয়।।কিন্তু আমি জানি তোর ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে আমার সারা শরীরে, আমার ঘরে, আমার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে আগোছালো ভাবে আজো আমি সব গুছিয়ে উঠতে
পারিনি সেই সব ভালোবাসা জানি গুছিয়ে রাখলে ভালো হতো, কিন্তু থাক, ওগুলো ছড়ানোই থাক গুছিয়ে নিলে সে বড় সুখের হতো, কিন্তু তোর চলে যাওয়া সে বড়ো
............
ভালোবাসা লেখা হয় কবিতায় কবিতায়
পাখির ঠোঁটের সুর তুলে আনা
ফিদার ছবিতে
মাধুরীরর কোমর নাভিতে
ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া
চৌরাশিয়ার বাঁশি, আহা ভালোবাসি
ভালোবাসা ছড়ানো ছিটানো কত না
চিঠিতে, গল্পে পাতায় পাতায়
লেখা হয়
রমনায়
চন্দ্রিমা উদ্যানে
গাছের বাকল তুলে
নখের আঁচরে
ভালোবাসা চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো
আকাশে বাতাসে দেহে চোখের পাতায়
একবার যদি কেউ কুড়িয়ে কুড়িয়ে
অমল ভালোবাসা হৃদয়ে করত জমা
আহা! কত সুখ হত।।